তরুণ-তরুণীরাও কেন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে
ভূমিকা
একসময় ডায়াবেটিসকে বলা হতো শুধু বয়স্কদের রোগ। কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রার প্রভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং প্রযুক্তিনির্ভর জীবনের কারণে এখন তরুণ-তরুণীরাও ব্যাপকভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার দ্রুত বাড়ছে। এটি শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও উদ্বেগজনক একটি বিষয়।
ডায়াবেটিস আসলে কী?
ডায়াবেটিস হলো এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেখানে শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি বা ইনসুলিন প্রতিরোধের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের:
-
টাইপ-১ ডায়াবেটিস – যা সাধারণত শিশু ও কিশোরদের হয় এবং ইনসুলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
-
টাইপ-২ ডায়াবেটিস – জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে, যা বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
তরুণ-তরুণীদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ
১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে তরুণদের মধ্যে। এগুলো শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমিয়ে ওজন বৃদ্ধি করে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
২. শরীরচর্চার অভাব
আজকের তরুণ প্রজন্ম পড়াশোনা, চাকরি কিংবা প্রযুক্তির কারণে অধিকাংশ সময় বসে কাটায়। হাঁটা, দৌড়ানো বা খেলাধুলা প্রায় নেই বললেই চলে। শারীরিক কার্যকলাপের অভাবই ডায়াবেটিসের অন্যতম বড় কারণ।
৩. স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন
স্থূলতা ডায়াবেটিসের প্রধান ঝুঁকি উপাদান। অতিরিক্ত মেদ শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিশেষ করে যারা কোমরের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমায়, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি।
৪. মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব
শিক্ষা, ক্যারিয়ার, প্রতিযোগিতা ও চাকরির চাপ তরুণদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলে। দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে রক্তে শর্করা বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
৫. পারিবারিক ইতিহাস ও জেনেটিক কারণ
যদি পরিবারের কারও ডায়াবেটিস থাকে, তবে তরুণ বয়সেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জেনেটিক কারণও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৬. প্রযুক্তিনির্ভর জীবন
মোবাইল, কম্পিউটার, গেমস ও ইন্টারনেট আসক্তির কারণে তরুণরা ঘরের ভেতর সীমাবদ্ধ থেকে দীর্ঘ সময় বসে থাকে। শারীরিক পরিশ্রম না করায় তারা ধীরে ধীরে ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছে।
তরুণ বয়সে ডায়াবেটিসের লক্ষণ
তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
-
অতিরিক্ত তৃষ্ণা ও বারবার প্রস্রাব
-
অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
-
ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, কিন্তু ওজন কমে যাওয়া
-
ঝাপসা দেখা
-
ক্ষত বা ঘা শুকাতে দেরি হওয়া
-
ঘন ঘন সংক্রমণ হওয়া
এসব লক্ষণকে হালকাভাবে না দেখে দ্রুত পরীক্ষা করানো জরুরি।
তরুণদের মধ্যে ডায়াবেটিসের প্রভাব
স্বাস্থ্যগত প্রভাব
-
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি
-
চোখের সমস্যা (রেটিনোপ্যাথি)
-
কিডনির জটিলতা
-
স্নায়ুর ক্ষতি
-
বন্ধ্যাত্ব ও হরমোনজনিত সমস্যা
সামাজিক ও মানসিক প্রভাব
ডায়াবেটিস তরুণ বয়সে ধরা পড়লে তাদের পড়াশোনা, ক্যারিয়ার এবং সামাজিক জীবনে মানসিক চাপ তৈরি করে। অনেক সময় চাকরির সুযোগ বা বিয়ে সম্পর্কেও সমস্যা তৈরি হয়।
তরুণদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে করণীয়
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
-
বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া
-
চিনি ও মিষ্টিজাত খাবার কমানো
-
ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় এড়িয়ে চলা
-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার গ্রহণ
২. নিয়মিত শরীরচর্চা
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং বা ব্যায়াম ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকর।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ
শরীরের ওজন স্বাভাবিক সীমায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। BMI নিয়ন্ত্রণে রাখলে ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক শান্তি
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম, ধ্যান বা মেডিটেশন, এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ তরুণদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
যাদের পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে, তাদের নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা করা উচিত।
উপসংহার
ডায়াবেটিস এখন আর কেবল বয়স্কদের রোগ নয়, বরং তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আধুনিক জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ ও শারীরিক কার্যকলাপের অভাবই এর মূল কারণ। তাই তরুণদের এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাসই পারে ডায়াবেটিসকে দূরে রাখতে।
অন্য খবর বিডিও দেখতে ভিজিট করুন…………
🌐 ওয়েবসাইট: Shobkhobor24 https://www.shobkhobor24.com
🎥 ইউটিউব: Shobkhobor24 YouTube https://www.youtube.com/@shobkhobor24
📘 ফেসবুক: Shobkhobor24 Facebook https://www.facebook.com/profile.php?id=61578376864291