পাকস্থলীর ক্যান্সার: লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ভূমিকা
মানুষের হজম প্রক্রিয়ার মূল অঙ্গ হলো পাকস্থলী। এখানে খাবার ভেঙে শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু এই অঙ্গেই যদি ক্যান্সার বাসা বাঁধে, তখন তা মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। প্রথম দিকে সাধারণ হজমের সমস্যার মতোই মনে হলেও আসলে এটি হতে পারে পাকস্থলীর ক্যান্সার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয় এবং অনেকেই দেরিতে শনাক্ত হওয়ার কারণে জীবন হারান। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে রোগ শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
পাকস্থলীর ক্যান্সার কী?
পাকস্থলীর ভেতরের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত হয়ে টিউমার তৈরি করলে তাকে পাকস্থলীর ক্যান্সার বলা হয়। এই ক্যান্সার ধীরে ধীরে পুরো পাকস্থলী, খাদ্যনালী বা শরীরের অন্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণ
প্রথম দিকে স্পষ্ট কোনো উপসর্গ না থাকলেও কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা দিতে পারে—
-
পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি – বারবার পেটব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হওয়া।
-
অম্বল ও গ্যাস – দীর্ঘদিনের অম্বল ও হজমে সমস্যা।
-
খাবারের রুচি কমে যাওয়া – হঠাৎ ক্ষুধা কমে যাওয়া।
-
অল্প খাওয়ায় পেট ভরে যাওয়া – সামান্য খাবার খেলেই পেট ভর্তি মনে হওয়া।
-
ওজন কমে যাওয়া – অকারণে শরীরের ওজন হ্রাস।
-
বমি বা বমিভাব – বারবার বমি বা রক্তবমি হওয়া।
-
কালো মল বা রক্তযুক্ত মল – হজম প্রক্রিয়ায় রক্তক্ষরণের ইঙ্গিত।
⚠️ এই উপসর্গগুলো দীর্ঘদিন থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণ
পাকস্থলীর ক্যান্সারের সঠিক কারণ পুরোপুরি জানা না গেলেও বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় রয়েছে—
-
অস্বাস্থ্যকর খাবারাভ্যাস: অতিরিক্ত তেল-ঝাল, ফাস্টফুড ও সংরক্ষিত খাবার খাওয়া।
-
হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি (H. pylori) সংক্রমণ।
-
ধূমপান ও মদ্যপান: এগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়ায়।
-
বংশগত কারণ: পরিবারে আগে কারও পাকস্থলীর ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
-
দীর্ঘমেয়াদি হজমের সমস্যা: যেমন গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ক্রনিক গ্যাসট্রাইটিস।
-
স্থূলতা ও কম শারীরিক কার্যকলাপ।
কিভাবে বোঝা যাবে পাকস্থলীর ক্যান্সার?
চিকিৎসকরা কয়েকটি পরীক্ষা করে পাকস্থলীর ক্যান্সার শনাক্ত করেন—
-
এন্ডোস্কপি: পাকস্থলীর ভেতর ক্যামেরা ঢুকিয়ে দেখা।
-
বায়োপসি: টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা।
-
সিটি স্ক্যান বা এমআরআই: টিউমারের অবস্থান ও বিস্তার নির্ণয়।
-
রক্ত পরীক্ষা: রক্তশূন্যতা বা সংক্রমণ আছে কিনা তা বোঝা।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও ক্যান্সারের ধাপের ওপর—
-
সার্জারি: পাকস্থলীর টিউমার অপসারণ।
-
কেমোথেরাপি: ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করতে ওষুধ প্রয়োগ।
-
রেডিওথেরাপি: বিকিরণ দিয়ে ক্যান্সার কোষ নষ্ট করা।
-
টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি: আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা রোগীর শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রতিরোধে করণীয়
-
প্রতিদিন তাজা ফল ও শাকসবজি খাওয়া।
-
ধূমপান ও মদ্যপান সম্পূর্ণ পরিহার করা।
-
অতিরিক্ত ঝাল, তেল ও প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।
-
সুস্থ ওজন বজায় রাখা এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা।
-
হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ থাকলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া।
-
বারবার হজমের সমস্যা হলে অবহেলা না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া।
উপসংহার
পাকস্থলীর ক্যান্সার এক নীরব ঘাতক। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রেই রোগী সুস্থ হতে পারেন। তাই দীর্ঘদিনের হজমের সমস্যা, অম্বল, ওজন কমে যাওয়া কিংবা অস্বাভাবিক বমি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই পারে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে।