দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে উদ্বিগ্ন ৭৫% মানুষ
ভূমিকা
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন একটি বড় সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৭৫% মানুষ দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন। প্রতিদিনের জীবনযাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ছেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: কেন উদ্বেগ বাড়ছে?
১. নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম
চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, সবজি, মাছ ও মাংসের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। আগে যে পরিবার মাসে ১৫ হাজার টাকায় সংসার চালাতে পারতো, এখন একই খরচ করতে হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকা।
২. জ্বালানি ও বিদ্যুতের খরচ
জ্বালানির দাম বাড়লে পরিবহন খরচ বাড়ে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাজারে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বাড়ে, ফলে সাধারণ ভোক্তাকে সেই বোঝা বহন করতে হয়।
৩. বিশ্ববাজারের প্রভাব
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, গম ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেলে তা বাংলাদেশের বাজারে প্রভাব ফেলে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট থাকায় আমদানি ব্যয় আরও বেড়ে গেছে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে প্রভাব
১. মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংকট
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সাধারণত সঞ্চয় করে কিছুটা নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অতিরিক্ত খরচের কারণে তাদের সঞ্চয় কমে যাচ্ছে। অনেক পরিবারকে বাধ্য হয়ে ঋণ নিতে হচ্ছে।
২. নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা
দিনমজুর, রিকশাচালক, গার্মেন্টস শ্রমিক কিংবা ছোট ব্যবসায়ীদের আয় একই থাকলেও খরচ দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। ফলে তিনবেলা খাবার নিশ্চিত করাই অনেক পরিবারের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৩. স্বাস্থ্য ও পুষ্টির অবনতি
অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকেই প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারছেন না। ফলে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি, বয়স্কদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
৪. সামাজিক প্রভাব
অর্থনৈতিক চাপের কারণে অনেক পরিবারে অশান্তি বাড়ছে। পারিবারিক কলহ, হতাশা ও মানসিক চাপ বাড়ছে, যা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ
১. টিসিবি’র কার্যক্রম
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) স্বল্প মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করছে। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ খুবই সীমিত।
২. বাজার মনিটরিং
বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী সমাধান এখনো দৃশ্যমান নয়।
৩. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ
সরকার স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে, যাতে আমদানিনির্ভরতা কমে।
জনগণের প্রত্যাশা
মানুষ চায়—
-
দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা
-
বাজারে কৃত্রিম সংকট ও সিন্ডিকেটের অবসান
-
আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাত্রা
-
সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমাধান কীভাবে সম্ভব?
১. স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি
দেশে কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ালে আমদানিনির্ভরতা কমবে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।
২. বাজার ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা
সিন্ডিকেট ভাঙতে আইনি পদক্ষেপ, নিয়মিত মনিটরিং ও সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখা জরুরি।
৩. ভর্তুকি ব্যবস্থা
গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সরকার ভর্তুকি বাড়াতে পারে, যাতে তারা ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারে।
৪. কর্মসংস্থান বৃদ্ধি
মানুষের আয় বাড়লে দ্রব্যমূল্যের চাপ কিছুটা সহনীয় হয়। তাই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি জরুরি।
জরিপের ফলাফল: উদ্বেগের চিত্র
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে—
-
৭৫% মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন
-
১৫% মানুষ মনে করেন, তারা কোনোমতে টিকে আছেন
-
মাত্র ১০% মানুষ বলছেন, তাদের উপর তেমন প্রভাব পড়েনি
এ থেকে বোঝা যায়, দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক চাপে রয়েছ
উপসংহার
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক ও মানসিক সমস্যাও তৈরি করছে। দেশের ৭৫% মানুষ যখন এই নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন বোঝা যায় সমস্যার গভীরতা কতটা। তাই সরকার, নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ন্যায্যমূল্যে পণ্য নিশ্চিত করা গেলে দেশের জনগণের জীবনমান অনেকাংশে উন্নত হবে।