ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন, বিমানবন্দর-স্কুল বন্ধ ঘোষণা!
ভূমিকা
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কবার্তায় জানা গেছে, প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দ্রুত সুপার টাইফুনে রূপ নিয়েছে। এই টাইফুনের সম্ভাব্য আঘাত নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যেই ঝড়ের গতিপথে থাকা কয়েকটি দেশ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে অনেক জায়গায় বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর এবং স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) এখন পর্যন্ত সুপার টাইফুন নিয়ে সরাসরি কোনো সতর্কতা দেয়নি। তবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে নিম্নচাপ এবং ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুপার টাইফুন কী?
সাধারণ ঘূর্ণিঝড় থেকে সুপার টাইফুন আলাদা।
-
যখন বাতাসের গতি ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটারের বেশি হয়, তখন সেটিকে সুপার টাইফুন বলা হয়।
-
এটি সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী।
-
প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলেই সাধারণত এ ধরনের টাইফুনের সৃষ্টি হয়।
আবহাওয়াবিদদের মতে, চলতি বছরের এই টাইফুনটি হতে পারে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়।
কোন কোন দেশ ঝুঁকিতে
আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, ফিলিপাইনস, তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীনের উপকূলীয় এলাকাগুলো সরাসরি ঝড়ের কবলে পড়তে পারে।
-
ফিলিপাইনসে ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
-
অনেক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
-
স্কুল, কলেজ এবং সরকারি অফিসও বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই ঝড়টি বাংলাদেশ বা বঙ্গোপসাগরের দিকে সরাসরি আসছে না। তবে এর প্রভাবে বাংলাদেশের আকাশে মেঘলা আবহাওয়া, ভারী বৃষ্টি এবং মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া বইতে পারে।
বিমানবন্দর ও স্কুল বন্ধের ঘোষণা
ঝড়ের গতিপথে থাকা দেশগুলোতে:
-
আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে।
-
সমুদ্রপথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ফিলিপাইনসের রাজধানী ম্যানিলার বিমানবন্দর থেকে শতাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। তাইওয়ানে বহু স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশে সম্ভাব্য প্রভাব
বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো সরাসরি টাইফুনের আঘাতের পূর্বাভাস নেই। তবে:
-
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
-
সমুদ্রবন্দরগুলোকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
-
মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে না যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, টাইফুন সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত না করলেও এর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকবে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
সরকার ও প্রশাসনের প্রস্তুতি
বাংলাদেশ সরকার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সব সময়ের মতো প্রস্তুত রয়েছে।
-
উপকূলীয় জেলাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
-
স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
-
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট দিচ্ছে।
সাধারণ মানুষের করণীয়
বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
-
অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলা।
-
সমুদ্র উপকূলে না যাওয়া।
-
স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা।
-
খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত রাখা।
-
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আপডেট নিয়মিত অনুসরণ করা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই জরুরি সহায়তার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা আশঙ্কা করছে, ঝড়ের আঘাতে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোও খবরটি গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করছে।
অর্থনীতি ও পরিবেশের ক্ষতি
সুপার টাইফুন আঘাত হানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
-
কৃষি জমি প্লাবিত হয়ে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা তৈরি হবে।
-
যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
-
বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা অচল হয়ে যাবে।
-
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যেরও বড় ক্ষতি হবে।
উপসংহার
সুপার টাইফুনের আতঙ্ক বর্তমানে ফিলিপাইনস, তাইওয়ান ও চীনের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সরাসরি ঝুঁকিতে না থাকলেও এর প্রভাবে আবহাওয়া খারাপ হতে পারে। তাই আমাদেরও সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া সবচেয়ে বড় সুরক্ষা।